Choose your product from the mega showcase from thousands of sellers
BD Trade Blogs
> Blogs > কবিতা > চেতনা-লিখন

চেতনা-লিখন


জীবনানন্দ দাশ

শতাব্দীর এই ধূসর পথে এরা ওরা যে যার প্রতিহারী।
আলো অন্ধকারের ক্ষণে যে যার মনে সময়সাগরের
ক্লান্তিবিহীন শব্দ শোনে;
অথবা তা নাড়ীর রক্তস্রোতের মতন ধ্বনি
না শুনে শোনা যায়।

সময় গতির শব্দময়তাকে তবু ধীরে ধীরে যথাস্থানে রেখে
ট্রামের রোলে আরেক ভোরের সাড়া পেয়ে কেউ বা এখন শিশু,
কেউ বা যুবা, নটী, নাগর, দক্ষ-কন্যা, অজের মুণ্ড, অখল
পোলিটিশ্যান্‌
এদের হাতেই দিনের আলো নিজের সার্থকতা
খুঁজে বেড়ায়।

চারিদিকেতে শিশুরা সব অন্ধ এঁদো গলির অপার পরলোকে আজ
জগৎ-শিশুর প্রাণের আকাশ ভেবে
জানে না কবে নীলিমাকে হারিয়ে ফেলেছে।
শিশু-অমঙ্গলের সকল জনিতারা এই পৃথিবীর সকল নগরীর
আবছায়াতে ক্লান্ত-কলকাকলীর প্রেতের পরিভাষা
ছড়িয়ে কবে ফুরিয়ে আবার সহজ মানব-কণ্ঠে কথা ক'বে?
আকাশমর্ত্যে মহাজাতক সূর্য-গ্রহণ ছাড়া
কোথাও কোনো তিলেক বেশি আলো
রয়েছে জানে না কি?
তবুও সবাই তারা
অন্ধকারের ভিতর থেকে ক্রমে ক্রমে যার হয়ে কি আসছে আরো
বিশাল আলোতে?

কোথায় ট্রাম উধাও হয়ে চ'লেছে আলোকে।
কয়লা গ্যাসের নিরেস ঘ্রাণ ছড়িয়ে আলোকে
কোথায় এত বিমূঢ় প্রাণজন্তু নিয়ে অনন্ত বাস্‌, কার্‌,
এমন দ্রুত আবেগে চলেছে!
কোথাও দূরে দেবাত্মা পাহাড় রয়েছে কি?
ইতিহাসের ধারণাতীত সাগর নীলিমা?
চেনা জানা নকল আলোর আকাশ ছেড়ে সহজ সূর্য আছে।
নব নবীন নগর মেশিন প্রাণের বন্দর-
জলের বীথি আকাশী নীল রৌদ্রকণ্ঠী পাখি?
সেখানে প্রেমের বিচারসহ চোখের আলোয় গোলকধাঁধার থেকে
মুখ মানুষ নতুন সূর্য তারার পথের জ্যোতিধূর্লি-ধূসর হাসি দেখে
কি দীন, সহৃদয়?
জ্ঞান সেখানে অফুরন্ত প্যারাগ্রাফে ক্লান্তিহীন শব্দ যোজনায়
কিছুই নেই প্রমাণ করে শূন্যতাকে কুড়ায় নাক' তবে?

পরস্পরের দাবির কাছে
অন্তরঙ্গ আত্মনিবেদনে
নবীন 'রে পরিচিত হওয়ার পরে নতুন পৃথিবী
রয়েছে জেনে আজকে ওরা চলার পথে ইতিহাসের চরম চেতনা;-
মানব নামের কঠিন হিসাব হয়তো মেলাতেছে
কী এক নতুন জ্যোতির্দেশী সমাজ সময় শান্তি গড়ার নীল সাগরের তীরে।

চোখে যাদের চলতে দেখি তারা অনেক দেরী করে অনাথ মরু সাগর ঘুরে চলে;
মনের প্রয়াণ মোড় ঘুরে কি দেখেছে সরণি-
সাহস আলো প্রাণ যেখানে সবার তরে শুভ-
এই পৃথিবী ঘরণী।


সাহিত্য >> কবিতা