Choose your product from the mega showcase from thousands of sellers
BD Trade Blogs
> Blogs > কবিতা > ভালো থাক্ অনির্বাণ

ভালো থাক্ অনির্বাণ


অসীম তরফদার

খুব ভালো আছে অনির্বান এখন।
এ নচিকেতার গানের সেই অনির্বান নয়
এ আমার বন্ধু, আমার সহপাঠি অনির্বান।
যে ভীষন মেধাবী হয়েও খুব ভাল ফল করেনি পরীক্ষায়
মানসিক রোগের উপর্যুপুরি আঘাতে যে
জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়েছে বারংবার,
অসুস্থ দিনগুলোতে যে লম্বা লম্বা পা ফেলে
উদ্দেশ্যহীন ছুটে গেছে এপথে সেপথে
আর ইংরেজী সংলাপে মনোযোগ কেড়েছে উৎসুক জনতার-
হ্যাঁ, এ সেই ভীষণ অভিমানি, বড় বেশী স্নেহ কাতর
খুব বেশী মমতা পিপাসু অর্নিবান।

ওর মাথার অসুখটা ঝর্নার জল পতনের মত প্রবল নয়
বরং সুক্ষè অথচ স্পষ্ট, ঠিক বয়সন্ধির পরিবর্তনের মতই।
সংসারের প্রতি ওর বাবার অনর্থক অবহেলা
ওর মায়ের প্রতি তার ঔদাসীন্য, আর
কোন এক জালিয়াতি মামলায় তার জড়ানোর কারণে
নানা মহল থেকে শোনা অশ্রাব্য কটুক্তি
তুষের আগুনের মত ধুকে ধুকে পুড়িয়েছে অনির্বানের অন্তর।
এই অদৃশ্য যন্ত্রনা, এই সব অসংগতি
আর প্রাপ্য মমতার অভাব এক সময় ওকে উন্মাদ করে দিল।

প্রথম বার অসুস্থ হয়ে এক সন্ধ্যায় ঝাউ বনের পাশে
খোলা মাঠে ঘাসের উপর শরীর ছড়িয়ে দিয়ে
অনির্বাণ বলেছিল-
“আজ হঠাৎ দিপুর সাথে দেখা
আদুরে গলায় কি যে মিষ্টি করে কথা বলল!
আমার জন্য ওর সে কি মায়া!
অথচ দেখ্, সবাই আমাকে পাগল বলে টিপ্পনি কাটে
উপহাস করে, তামাশা করে।
সত্যি কি কোন গন্ডগোল আমার মস্তিষ্কে?
আমি কি আসলেই অসুস্থ?”
অনির্বানের না-ঘুমানো লালচে চোখের তারা দুটি
আকাশের সন্ধ্যা তারার দিকে স্থির হয়ে যায়,
দুকোন ভিজে ওঠে এক অস্ফুষ্ট বেদনায়।

“দিপুর স্নেহ মাখা হাতের এতটুকু ছোঁয়া পেলে
একটুখানি আদর আর মমতা পেলে, এতটুকু ভালোবাসা পেলে
আমি ঠিক সুস্থ হয়ে যাবো, ভালো হয়ে যাবো।”
অনির্বানের আশা ব্যঞ্জক উক্তি গুলো ঝাউবন থেকে
আমার অন্তকর্নে বার বার ফিরে এলো,
মেঘবিহীন নির্মল আকাশ থেকে যেন বজ্র পতন হল,
আমার ভুবন যেন কেপে উঠল তার বিকট শব্দে, আর
চকিতে দিপুর মায়ভরা মুখ মনে পড়ে গেল-
অতি সাধারন এক মুখ অথচ কি স্নিগ্ধতা, কি শুভ্রতা তাতে!
এমন ফুলের মত মেয়ে,
সে কি তার ভবিষ্যতের উজ্জ্বল স্বপ্ন জলাঞ্জুলি দিয়ে
নিজেকে জড়াবে উম্মাদ এক যুবকের সাথে কিংবা
অনিশ্চিত অন্ধকারে পা বাড়াতে কি বলা যায় তাকে?
তবু ঠাট্টার ছলে একদিন হাসতে হাসতে বললাম দিপুকে,
দীঘির নিথর জলের দিকে তার দৃষ্টি অনড়


দিপুর অবয়বে ব্যক্তিত্বের ছটা যতটা প্রগাঢ়
তার চেয়ে বেশি তার হৃদয়ের বিশালতা-
যেখানে সংকীর্ন ভাবনা গুলো পায়নি প্রশ্রয়
পেয়েছে এক উন্মাদ যুবকের দায়িত্ব নেবার অসীম দুঃসাহস।
তার নিবেদিত স্নেহে প্রেমে আর নিবিড় মায়ায়
সে যাত্রায় সেরে উঠল অর্নিবান।

দিপুর হৃদয় সিন্ধুতে মহত্বের পূর্নতা যেমন ছিল 
তেমনই ছিল পারিবারিক শিক্ষা ও আত্নসম্মান
আর ছিল কুলের নীচুতা;
একদিন এই নিচু বংশের প্রশ্নই প্রকট হল 
অনির্বাণের কুলীন পরিবারে।
আবার অসুস্থ হল অনির্বাণ
আবারও উদভ্রান্ত ছুটে চলা, অসংলগ্ন সংলাপ...

অনির্বাণের সাথে আমার শেষ দেখা ঢাকাতে-
সে তখন সুস্থ হয়ে একটি সংস্থায় চাকুরীরত;
তার জন্য দীপুর ত্যাগের কথা স্মরন করল কৃতজ্ঞচিত্তে
আরও বলল দীপুকে ঘিরে নানা স্বপ্নের কথা।
কিন্তু ক’দিন বাদেই জানলাম,
সে আবার অসুস্থ হয়ে চলে গেছে বাড়ীতে;
আমার চিত্তপটে অনির্বাণের মলিন মুখের ছবি
বুকের মাঝে হতাশার দীর্ঘশ্বাস
আর মনের গভীরে দীপুর জন্য শুভকামনা,
যে নিজেকে জড়িয়েছে এমন এক অনিশ্চিত জীবনের সাথে।

তারপর আর কোন খবর পাইনি বহু বছর
কিংবা খবর রাখবার অবসর মিলেনি এই ব্যস্ত জীবনে।
গতকাল এক বন্ধুর কাছে খবর পেলাম
দীপুকে বিয়ে করে বেশ সুখে আছে এখন।
দিপুকে নিয়ে আমৃত্যু এভাবেই তুই সুখে থাক্ অনির্বাণ,
সুস্থ থাক্ এবং ভালো থাক্।


সাহিত্য >> কবিতা